প্রকাশিত: ১৮/০৫/২০১৬ ৭:৩৯ এএম
campতোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার  ::

রোহিঙ্গা জঙ্গিরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ভেতরে ঘাপটি মেরে থেকে নানা কৌশলে অস্ত্র, গোলাবারুদসহ বিস্ফোরক দ্রব্য সংগ্রহের কাজে জড়িত রয়েছে। এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ তারা দেশের ভেতরে ও বাইরে অন্য জঙ্গি সংগঠনের কাছে পাচার করছে। বড় ধরনের নাশকতার কাজে ব্যবহারের জন্যও জঙ্গিরা অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ সীমান্ত থেকে গত ৯ মাসে অস্ত্র-গোলাবারুদসহ বিজিবি ও র‌্যাবের হাতে আটক হয়েছে চার রোহিঙ্গা জঙ্গি। কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, আটক জঙ্গিদের দুজন আদালতে গোলাবারুদের চালান পাচারের কথা স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের নাম মোহাম্মদ সালাম (২৫)। তিনি নিজেকে ‘আরাকান মুজাহিদুল জামাতে ইসলামী’ নামের একটি সংগঠনের সদস্য বলে পরিচয় দিয়েছেন।

সালামের আসল বাড়ি মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের আকিয়াব জেলার মণ্ডু খুল্লুম এলাকায়। বাংলাদেশে তিনি টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে থাকতেন। এই শিবিরের আনসার ক্যাম্পেই গত বৃহস্পতিবার রাতে হামলা চালিয়ে আনসার কমান্ডারকে হত্যা করে ১১টি অস্ত্র ও ৬৭০টি গুলি লুট করেছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশের ধারণা, এ ঘটনায়ও রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সংযোগ থাকতে পারে।

তবে হামলার পর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও লুণ্ঠিত অস্ত্র-গুলি উদ্ধারে কিনারা করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি সাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান,

লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারে সীমান্ত এলাকায় পুলিশ, র‌্যাবসহ যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ-কক্সবাজার মহাসড়কের হাবিরছড়া চেকপোস্টে কক্সবাজার থেকে টেকনাফমুখী একটি যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি চালিয়ে বিজিবি সালামকে আটক করে। তাঁর কাছ থেকে বন্দুকের ৮০টি কার্তুজ জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় টেকনাফের বিজিবির পক্ষ থেকে ওই দিন টেকনাফ থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়। সালাম বিজিবিকে জানান, কক্সবাজারের পাহাড়তলী এলাকায় বসবাসকারী কাদির নামের আরেক জঙ্গি তাঁকে এসব গুলি দিয়ে পাঠাচ্ছিলেন মিয়ানমারে। মিয়ানমারে তাঁর সংগঠনের সদস্য ইসমাঈলের হাতে সেগুলো পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাসুদ মুন্সী কালের কণ্ঠকে জানান, আদালতের মাধ্যমে সালামকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। তিনি গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য দিয়েছেন। পরে এ মামলায় টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর কাটাছড়া মুখ মসজিদের ইমাম নুরুল আলমকেও আটক করে পুলিশ। তিনিও আরাকানের ভুচিদং এলাকার বাসিন্দা এবং রোহিঙ্গা জঙ্গি দলের সদস্য। ইমামের ছদ্মবেশে টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় থাকতেন। গত ৩ মার্চ সালাম কক্সবাজার আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে সালাম বলেছেন, তিনি সাত-আট বছর আগে মিয়ানমারের রাসিদং থানার কিয়াংডেং মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতেন। ওই মাদ্রাসার ইসমাইল হুজুর তাঁদের শিক্ষক ছিলেন। তিনি (ইসমাইল) আমাদের নিয়ে সেখানে নিয়মিত বৈঠক করতেন। বৈঠকে মিয়ানমারের তৎকালীন জান্তা কর্তৃক মুসলিমদের নির্যাতনের ব্যাপারে আলাপ হতো। জান্তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়ার কথা বলা হতো। এ জন্য গোলাবারুদ দরকার ছিল। ইসমাইল তাঁকে বলেছেন, টেকনাফের শামলাপুরের একটি মাদ্রাসায় নুরুল আলম  থাকেন। তাঁর কাছ থেকে গুলির চালান নিয়ে যেতে হবে। গত জানুয়ারির শেষ দিকে শামলাপুরের মসজিদের ইমামের ছদ্মবেশে ছিলেন নুরুল আলম। তাঁর কাছ থেকে গুলির চালান নিয়ে যাওয়ার পথেই ধরা পড়েন সালাম। সালামের পরদিন নুরুল কক্সবাজার আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুশান্ত চাকমার কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। নুরুল বলেছেন, পুতুইয়া নামের একজন গুলির চালানটি তাঁর কাছে দেন। শামলাপুর বাজারে এ ঘটনার সময় সালামও উপস্থিত ছিলেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাসুদ মুন্সী গতকাল মঙ্গলবার জানান, আনসার ক্যাম্পের হামলার পর এ মামলার বিষয়টি এখন নতুন করে খতিয়ে দেখা হবে।

এদিকে র‌্যাব সদস্যরা গত ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সদর থেকে দুই রোহিঙ্গা জঙ্গিকে আটক করে। তাঁরা হলেন—মোহাম্মদ ইউনুস (৩৫) ও মোহাম্মদ রফিক (২৬)। উভয়ের বাড়িই আরাকানের মণ্ডু এলাকায়। তাঁদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচটি গুলি ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য জব্দ করা হয়। কক্সবাজার সদরের উত্তর তারাবনিয়া ছড়ার একটি ফ্ল্যাট থেকে তাঁদের আটক করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা হয়। এ মামলায় গত ডিসেম্বরে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের নাগরিক হলেও তাঁরা জঙ্গি সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের প্রশিক্ষণ নিতে কক্সবাজারে ঘাপটি মেরে ছিলেন। বান্দরবানের অরণ্যে রয়েছে আরএসওর প্রশিক্ষণ ঘাঁটি।

 সূত্র কালেরকন্ঠ

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু, দৈনিক উৎপাদন ৩০ মেগাওয়াট

কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছেছবি: প্রথম আলো কক্সবাজার সদর উপজেলার ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টার্গেট কিলিং!

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে ‘টার্গেট কিলিং’। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ...

জান্নাতুলকে খুনের কথা আদালতে স্বীকার করলেন কক্সবাজারের রেজা

রাজধানীর পান্থপথে আবাসিক হোটেলে চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ...